অমুসলিমদের উৎসবে অংশগ্রহণ
বিভিন্ন ধর্মের মানুষের সঙ্গে বসবাস করতে গিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, দুর্গাপূজা বা বড়দিনের মতো উৎসবে আমরা কি অংশ নিতে পারি? এই লেখার উদ্দেশ্য হলো কুরআন, হাদিস, সাহাবিদের জীবন এবং আলেমদের মতামতের আলোকে বিষয়টি সহজভাবে ব্যাখ্যা করা।
গবেষণায় দেখা যায়, এই উৎসবগুলোর মূল বিশ্বাস ইসলামের প্রধান ভিত্তি ‘তাওহীদ’ বা এক আল্লাহর ধারণার সঙ্গে মেলে না। তাই এসব অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া, শুভেচ্ছা জানানো বা তাদের ধর্মীয় প্রতীকের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা মুসলিমদের নিজস্ব ধর্মীয় পরিচয় ধরে রাখতে এবং শিরকের মতো বড় পাপ থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।
তবে এর অর্থ এই নয় যে, অমুসলিমদের সঙ্গে আমাদের সামাজিক সৌজন্য বা ভালো ব্যবহার করা যাবে না। ইসলাম ‘ইবাদত’ (উপাসনা) এবং ‘মু‘আমালাত’ (সামাজিক সম্পর্ক) এ দুটি বিষয়ের মধ্যে একটি স্পষ্ট পার্থক্য করেছে। প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষা এবং মানবিক সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর ইসলাম সবসময়ই জোর দিয়েছে।
ভূমিকা
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যেখানে বিশ্বাস, উপাসনা এবং সামাজিক সম্পর্কের ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। বিভিন্ন ধর্মের মানুষের সঙ্গে বসবাসের কারণে, তাদের ধর্মীয় উৎসবে আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে অনেকেই ভাবেন। দুর্গাপূজা বা বড়দিনের মতো অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া, শুভেচ্ছা জানানো বা তাদের আয়োজনে যোগ দেওয়া যাবে কি না—এই প্রশ্নটি ঈমান রক্ষা ও সামাজিক সম্প্রীতির ভারসাম্য নিয়ে আসে।
এই লেখায় আমরা কুরআন, রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাহ, সাহাবিদের সিদ্ধান্ত এবং আলেমদের মতামতের আলোকে বিষয়টি গভীরভাবে জানার চেষ্টা করব। এখানে আলোচনা হবে:
- ইসলামের মূল ভিত্তি: তাওহীদ ও শিরক।
- অমুসলিমদের উৎসবের পেছনের বিশ্বাস এবং ইসলামী দৃষ্টিকোণ।
- কুরআন, হাদিস ও সাহাবিদের জীবন থেকে সরাসরি প্রমাণ।
- চার মাযহাবসহ অন্য আলেমদের মতামত।
- শুভেচ্ছা, উপহার এবং খাবার গ্রহণ নিয়ে ইসলামের বিধান।
- ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে কীভাবে সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষা করা যায়।
আমাদের উদ্দেশ্য হলো, ইসলামের মূল উৎস থেকে ধাপে ধাপে প্রমাণ তুলে ধরে একটি পরিষ্কার সিদ্ধান্তে পৌঁছানো, যা একজন মুসলিমকে তার বিশ্বাস রক্ষা করে সমাজে চলতে সাহায্য করবে।
প্রথম অধ্যায়: ইসলামের মূল ভিত্তি: তাওহীদ এবং শিরকের ভয়াবহতা
অমুসলিমদের উৎসবে অংশগ্রহণের বিষয়টি বুঝতে হলে, প্রথমে ইসলামের মূল বিশ্বাস ‘তাওহীদ’ এবং এর বিপরীত ‘শিরক’ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি।
১.১ তাওহীদ: ইসলামের কেন্দ্রবিন্দু
ইসলামের ভিত্তিই হলো তাওহীদ। এর অর্থ, আল্লাহকে তাঁর অস্তিত্ব, গুণাবলি, কাজ এবং উপাসনার অধিকারে এক ও অদ্বিতীয় হিসেবে বিশ্বাস করা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন:
বলুন, তিনি আল্লাহ্, এক, অদ্বিতীয়। আল্লাহ্ কারও মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয়নি। এবং তাঁর সমকক্ষ আর কেউই নেই। (সূরা আল-ইখলাস, ১-৪)
১.২ শিরক: সবচেয়ে বড় পাপ
তাওহীদের বিপরীত হলো শিরক, অর্থাৎ আল্লাহ্র সাথে অন্য কাউকে অংশীদার বানানো। ইসলামে শিরককে সবচেয়ে বড় এবং ক্ষমার অযোগ্য পাপ বলা হয়েছে। আল্লাহ্ বলেন:
নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁর সাথে শিরক করাকে ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আর যে আল্লাহ্র সাথে অংশীদার তৈরি করে, সে এক মহাপাপ করে। (সূরা আন-নিসা, ৪৮)
১.৩ দুর্গাপূজা ও বড়দিনের বিশ্বাসের বিশ্লেষণ
দুর্গাপূজা বা বড়দিনের মতো উৎসবগুলো কেবল সামাজিক অনুষ্ঠান নয়, এর মূলে এমন কিছু বিশ্বাস রয়েছে, যা ইসলামের তাওহীদের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
- দুর্গাপূজা: এই উৎসবের মূল হলো দেবী দুর্গাকে সৃষ্টিকর্তার অংশ হিসেবে পূজা করা, যা মূর্তিপূজার শামিল। ইসলামে যেকোনো সৃষ্টির উপাসনা করা স্পষ্ট শিরক।
- বড়দিন: এই উৎসবের মূল বিশ্বাস হলো ঈসা (আঃ)-কে ‘আল্লাহ্র পুত্র’ মনে করা এবং তাঁর জন্মদিন পালন করা। ইসলাম ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহ্র সম্মানিত নবী ও রাসূল হিসেবে স্বীকার করে, তবে ‘আল্লাহ্র পুত্র’ হিসেবে নয়। কুরআনে আল্লাহ্র জন্য সন্তান নির্ধারণ করাকে বড় শিরক বলা হয়েছে।
তারা বলে, ‘দয়াময় (আল্লাহ্) সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তোমরা তো এক জঘন্য কথা বলছ। এতে আকাশমণ্ডলী ফেটে পড়ার, পৃথিবী খণ্ড-বিখণ্ড হওয়ার এবং পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়ার উপক্রম। কারণ তারা দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে। (সূরা মারইয়াম, ৮৮-৯১)
তাই, যেহেতু এই উৎসবগুলোর ভিত্তি শিরকের ওপর, এতে কোনোভাবে অংশ নেওয়া বা সমর্থন করা মুসলিমদের ঈমানের জন্য ক্ষতিকর।
দ্বিতীয় অধ্যায়: সরাসরি প্রমাণ: কুরআন, সুন্নাহ ও সাহাবিদের নির্দেশনা
অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশ নেওয়া নিয়ে ইসলামের অবস্থান খুবই স্পষ্ট, এবং ইসলামের মূল উৎসগুলোতেই এর প্রমাণ আছে।
২.১ কুরআনের নির্দেশনা: ‘যূর’ থেকে দূরে থাকা
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় বান্দাদের গুণের কথা বলতে গিয়ে বলেন:
এবং যারা ‘যূর’ (মিথ্যা বা বাতিল)-এর সাক্ষী হয় না এবং যখন কোনো অনর্থক কাজের পাশ দিয়ে যায়, তখন তারা আত্মসম্মান বাঁচিয়ে চলে যায়। (সূরা আল-ফুরকান, ৭২)
এই আয়াতে “الزُّورَ” (আয-যূর) শব্দটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের প্রাথমিক যুগের আলেম ও মুফাসসিরগণ এর অনেক ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যার মধ্যে অন্যতম হলো “মুশরিকদের উৎসব”।
- ইমাম ইবনে কাসীর (রহঃ) তাঁর তাফসীরে উল্লেখ করেছেন, প্রখ্যাত তাবেঈনদের মতে, (الزُّورَ) হলো মুশরিকদের উৎসব।
- ইমাম কুরতুবী (রহঃ) তাঁর তাফসীরে ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, এর দ্বারা মুশরিকদের উৎসব বোঝানো হয়েছে।
সুতরাং, এই আয়াতটি প্রমাণ করে যে, মুশরিকদের শিরকপূর্ণ উৎসবে যোগ না দেওয়া আল্লাহ্র প্রিয় বান্দাদের একটি বড় গুণ।
২.২ সুন্নাহর নির্দেশনা: অন্যদের অনুকরণ এবং স্বতন্ত্র উৎসব
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদিসে অমুসলিমদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিষয় থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।
- অনুকরণের নিষেধাজ্ঞা: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
- “যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুকরণ করবে, সে তাদেরই দলভুক্ত বলে গণ্য হবে।” (সুনানে আবু দাউদ, ৪০৩১)
- এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, যেসব কাজ অন্য ধর্মের প্রতীক হিসেবে পরিচিত, সেগুলো মুসলিমদের জন্য নিষিদ্ধ। উৎসবও প্রতিটি ধর্মের বড় প্রতীক।
- ইসলামের নিজস্ব উৎসব: আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন মদিনায় আসেন, তখন সেখানকার लोगोंর দুটি উৎসবের দিন ছিল। তিনি বললেন:
- “আল্লাহ্ তোমাদের এই দুটি দিনের পরিবর্তে আরও উত্তম দুটি দিন দিয়েছেন: ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর।” (সুনানে আবু দাউদ, ১১৩৪)
- এই হাদিস থেকে স্পষ্ট, ইসলাম আগের সব ধর্মীয় উৎসব বাদ দিয়ে মুসলিমদের জন্য দুটি বিশেষ উৎসব নির্ধারণ করেছে।
২.৩ সাহাবিদের কঠোর অবস্থান
খুলাফায়ে রাশিদিন এবং অন্য সাহাবিরা এ বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর ছিলেন।
- হযরত উমর (রাঃ)-এর নির্দেশনা:
- “মুশরিকদের উৎসবের দিন তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করো না। কারণ, সেই সময় তাদের ওপর আল্লাহ্র গজব নাজিল হয়।”
- “আল্লাহ্র শত্রুদের থেকে তাদের উৎসবের দিনে দূরে থাকবে।”
- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)-এর কথা:
- “যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিম দেশে বাস করে, তাদের নববর্ষ ও উৎসব পালন করে এবং তাদের মতোই আচরণ করে মারা যায়, কিয়ামতের দিন তাকে তাদের সাথেই ওঠানো হবে।”
উপরের সব প্রমাণ থেকে বোঝা যায়, অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে কোনো ধরনের অংশগ্রহণ ইসলামে নিষিদ্ধ।
তৃতীয় অধ্যায়: আলেমদের ঐক্যমত (ইজমা) ও ফতোয়া
কুরআন, সুন্নাহ ও সাহাবিদের নির্দেশনার ভিত্তিতে মুসলিম উম্মাহর ফকীহগণ (ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ) একমত হয়েছেন যে, অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ।
- ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেন: “প্রকৃত আলেমরা সবাই একমত যে, মুসলিমদের জন্য মুশরিকদের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া জায়েজ নেই।”
- ইমাম আয-যাহাবী (রহঃ) বলেন: “খ্রিস্টান বা ইহুদিদের উৎসব তাদের নিজেদের জন্য। কোনো মুসলিম তাতে অংশ নেবে না, ঠিক যেমন সে তাদের ধর্ম বা কিবলার অংশীদার হয় না।”
- এ বিষয়ে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহঃ) সবচেয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন:
- “মুসলিমদের জন্য অমুসলিমদের উৎসবের কোনো কিছুতেই সাদৃশ্য অবলম্বন করা জায়েজ নয়; না তাদের খাবার, না পোশাক, না গোসল, না আগুন জ্বালানো। এমনকি তাদের উৎসব উপলক্ষে ভোজের আয়োজন করা, উপহার বিনিময় করা, বা এমন কিছু বিক্রি করা, যা তাদের উৎসবে সাহায্য করে, তাও জায়েজ নয়।”
চতুর্থ অধ্যায়: সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়
৪.১ শুভেচ্ছা জানানো যাবে কি?
অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে “শারদীয় শুভেচ্ছা” বা “মেরি ক্রিসমাস” বলা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) এর ভয়াবহতা বোঝাতে গিয়ে বলেন:
“তাদের ধর্মীয় উৎসবে শুভেচ্ছা জানানোটা ক্রুশকে সিজদা করার জন্য কাউকে অভিনন্দন জানানোর মতোই। বরং আল্লাহ্র কাছে এটি তার চেয়েও জঘন্য। এটি মদ্যপান, হত্যা ও ব্যভিচারের জন্য কাউকে অভিনন্দন জানানোর চেয়েও মারাত্মক।”
৪.২ উপহার দেওয়া-নেওয়া
- উপহার দেওয়া: উৎসবকে সম্মান জানিয়ে অমুসলিমদের উপহার দেওয়া হারাম।
- উপহার গ্রহণ: তাদের উৎসবের দিনে দেওয়া উপহার গ্রহণ করা কিছু শর্তে জায়েজ। শর্তগুলো হলো:
-
- উপহারটি যেন তাদের ধর্মীয় প্রতীক (যেমন: মূর্তি, ক্রুশ) বা কোনো হারাম জিনিস না হয়।
- তা যেন উৎসবের জন্য জবাই করা পশুর মাংস না হয়।
- এটি গ্রহণের উদ্দেশ্য যেন তাদের ধর্মের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ না হয়, বরং প্রতিবেশী হিসেবে সম্পর্ক রক্ষা করা।
৪.৩ খাবার গ্রহণ
- উৎসবের খাবার ও প্রসাদ: যে খাবার তাদের ধর্মীয় উৎসবের জন্য তৈরি করা হয়েছে বা তাদের দেবতাদের নামে উৎসর্গ করা হয়েছে (যেমন: পূজার প্রসাদ), তা খাওয়া সবার মতেই হারাম।
- সাধারণ খাবার: যদি কোনো অমুসলিম উৎসবের দিন ছাড়া অন্য কোনো দিন হালাল উপাদান দিয়ে তৈরি সাধারণ খাবার উপহার দেয়, তবে তা গ্রহণ করা জায়েজ।
পঞ্চম অধ্যায়: সামাজিক সম্প্রীতি ও ধর্মীয় পরিচয়
ইসলাম অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব বর্জন করতে বললেও তাদের সাথে শত্রুতা বা সামাজিক দূরত্ব তৈরির নির্দেশ দেয় না।
৫.১ অমুসলিমদের সাথে ভালো ব্যবহার ও ন্যায়বিচার
ইসলাম শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসকারী অমুসলিমদের সাথে সর্বোচ্চ ভালো ব্যবহার, দয়া ও ন্যায়বিচারের নির্দেশ দেয়। আল্লাহ্ বলেন:
যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়িঘর থেকে বের করে দেয়নি, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন। (সূরা আল-মুমতাহানাহ, ৮)
৫.২ ধর্মীয় পরিচয় বজায় রেখে সম্পর্ক রক্ষা
একজন মুসলিম তার অমুসলিম প্রতিবেশীর ধর্মীয় উৎসবে অংশ না নিয়েও তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারে। যেমন:
- তাদের বিপদে-আপদে সাহায্য করা।
- অসুস্থ হলে খোঁজখবর নেওয়া।
- উৎসবের দিন ছাড়া অন্য যেকোনো দিন উপহার দেওয়া।
- তাদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামাজিক লেনদেন করা।
- সবচেয়ে বড় কথা, নিজের সুন্দর আচরণের মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্য তাদের সামনে তুলে ধরা।
এই ভারসাম্য রক্ষা করাই ইসলামের শিক্ষা। ধর্মীয় পরিচয় বিসর্জন দিয়ে সম্প্রীতি রক্ষা করা ইসলামের নীতি নয়। ইসলামের স্পষ্ট ঘোষণা:
“তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম, আর আমার জন্য আমার ধর্ম।” (সূরা আল-কাফিরুন, ৬)
উপসংহার
কুরআন, সুন্নাহ, সাহাবিদের জীবন এবং মুসলিম আলেমদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে এটি পরিষ্কার যে, দুর্গাপূজা, বড়দিন বা অন্য কোনো অমুসলিম ধর্মীয় উৎসবে অংশ নেওয়া, শুভেচ্ছা জানানো বা তাদের ধর্মীয় প্রতীক গ্রহণ করা মুসলিমদের জন্য কঠোরভাবে নিষিদ্ধ (হারাম)। এই নিষেধাজ্ঞা ইসলামের মূল বিশ্বাস ‘তাওহীদ’-কে রক্ষা করা এবং শিরকের মতো মহাপাপ থেকে মুসলিমদের বাঁচানোর জন্য একটি জরুরি বিধান।
এই বিধান অমুসলিমদের প্রতি ঘৃণা ছড়ানোর জন্য নয়, বরং মুসলিমদের ধর্মীয় পরিচয় ও ঈমান রক্ষার জন্য। ইসলাম যেমন শিরক ও কুফর থেকে দূরে থাকতে বলে, তেমনি অমুসলিমদের সাথে মানবিকতা, ভালো ব্যবহার, ন্যায়বিচার ও সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে গুরুত্ব দেয়। একজন মুসলিমের উচিত, নিজের ধর্মের নীতিতে অটল থেকে সুন্দর আচরণে সমাজে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উদাহরণ তৈরি করা।