প্রকৃত ইসলাম ও বাহ্যিক ইসলাম
হযরত খুবায়েব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ঘটনা আপনারা সকলেই শুনেছেন। তাঁকে শুলিকাষ্ঠে চড়ানো হয়েছিলো। চতুর্দিকে তীর বৃষ্টি তাঁকে ঝাঁজরা করে দিয়েছিল । তার শরীর আঘাতে আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। তিনি ধৈর্য ও স্থিরতার দ্বারা প্রতিহত করেছিলেন। এমনকি এ অবস্থায় তাকে বলা হয়েছিল, তুমি কি এ শর্তে রাজী আছো যে, তোমার জাগায় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আনা হবে?
হযরত খুবায়েব রাদিয়াল্লাহু আনহু বজ্রকন্ঠে উত্তর দিলেন, আমি তো এ শর্তেও রাজী নেই যে এখান থেকে আমাকে ছেড়ে দেয়া হবে আর তার পরিবর্তে হযরত রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীরে কোন কাটার আঁচড় লাগানো হবে।
বন্ধু, এটি কি বাহ্যিক ইসলাম বা ইসলামের বাহ্যিক আকৃতি ছিল? যা হযরত খুবায়েব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শূলিকাষ্ঠে স্থির রেখেছিল এবং তার জবান থেকে এ উত্তর বের করেছিল। না, বন্ধু না।
এটা ছিল প্রকৃত ইসলাম, এটা ছিল ইসলামের অন্তঃসার। অন্যভাবে বললে এটিই ইসলামের প্রকৃত মর্ম। এই প্রকৃত ইসলামই তার প্রতিটি আঘাতের ওপর মলমের প্রলেপ দিয়েছিল। ইসলামের এই প্রকৃত রূপই হযরত খুবায়েব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর এর সামনে প্রতিটি আঘাতের বিপরীতে জান্নাতের মনোরম দৃশ্য অঙ্কিত করছিল। মূলত, প্রকৃত ইসলাম তখন হযরত খুবায়েব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ডেকে ডেকে বলছিল, এই আঘাত হচ্ছে জান্নাতের ঐ চিরন্তন শান্তিতে পৌঁছানোর মাধ্যম। এখন সামান্য একটু কষ্ট সহ্য কর, জান্নাত তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। যদি এই নশ্বর পৃথিবীর ক্ষুদ্র এ কষ্ট সহ্য করতে পারো তবে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে অনাবিল সুখের অনন্ত জীবন।
এটাই হচ্ছে বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার প্রকৃত মর্ম। যখন তাঁকে বলা হল, তুমি কি এটা সমর্থন কর যে, তোমার জাগায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আনা হবে? তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেহারা মুবারক বাস্তবে তাঁ সম্মুখে উপস্থিত হয়ে গিয়েছিল। আর তাতেই তো তিনি ভালোবাসায় আবেগাপ্লুত হয়ে বললেন, ঐ শরীরে একটি কাটার আঁচড়ও তো আমি লাগতে দিব না।
এটা ছিল এমনই এক বাস্তবতা, যা তাঁর সকল প্রকার দুঃখ বেদনা, কষ্ট-যাতনা লাঘব করে দিয়েছিল। আর এটাই হচ্ছে ইসলামের প্রকৃত রূপ। কিন্তু ইসলামের বাহ্যিক আকৃতির এই কষ্ট এই বেদনা প্রতিহত করার শক্তি না তখন ছিল আর না এখন আছে। বাহ্যিক ইসলাম এই কষ্টের মোকাবেলা করতে অক্ষম।
আপনারা আমরা সকলেই অবগত আছি, বিগত ফেতনার সময়গুলোতে মানুষ ধারণার ভ্রান্তিকতার কারণে মানুষ ইসলামের আকৃতি পালটে ফেলেছে। মুসলমানেরা ইসলামি শিয়ারগুলো পরিবর্তন করে ফেলেছে। তারা ইসলামের মৌলিকতা হারিয়ে ফেলেছে। আর একারণেই আজ আমাদের মত হতভাগাদের কাছে ইসলামের বাহ্যিক আকৃতি তথা খোসা ছাড়া প্রকৃত কোন অন্তঃসার অবশিষ্ট নেই।
আপনারা শুনেছেন, হযরত সুহাইব রুমি রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন হিজরত করে চলে যেতে লাগলেন তখন মক্কার কাফেররা তার পথ আটকালো। তারা তাঁকে বলল, সুহাইব, তুমি তো চলে যেতেই পারবে তবে আমাদের এখান থেকে অর্জিত সম্পদ তুমি সাথে নিয়ে যেতে পারবে না। এবার ইসলামের বাস্তবতা সম্পদের বাস্তবতার মোকাবেলাই দাঁড়িয়ে গেল এবং বিজয়ী হল। কিন্তু এখানে যদি বাহ্যিক ইসলাম থাকত তবে তা কখনোই সম্পদের বাস্তবতার সাথে মোকাবেলা করতে পারত না।
আপনারা শুনেছেনে, হযরত আবু সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন হিজরত করে চলে যেতে লাগলেন তখন কাফেররা তাঁর রাস্তা আটকে বলল, তুমি তো চলে যেতেই পারো, কিন্তু আমাদের কন্যা, আমাদের সন্তান উম্মে সালামাহকে সাথে নিতে পারবে না। এবার ইসলামের বাস্তবতা আরেকটি বাস্তবতার মোকাবেলায় দাঁড়াল। সে বাস্তবতা হচ্ছে স্ত্রীর প্রতি প্রেম ও ভালোবাসা। কেননা স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা একটা অনস্বীকার্য বাস্তবতা। কিন্তু এখানেও ইসলামের বাস্তবতা বিজয়ী হল।
মূল- সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলি নদভী রহ.
অনুবাদ ও সম্পাদনা: হা-মীম যুবায়ের