বাহ্যিক ইসলাম বনাম প্রকৃত ইসলাম: ২য় পর্ব

আপনারা শুনেছেন হযরত আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু নামাজ পড়ছিলেন এমতাবস্থায় তার বাগানে একটি ছোট্ট পাখি ঢুকে পড়ে। কিছুক্ষণ পর সেটি বের হওয়ার রাস্তা পাচ্ছিল না। সেদিকে খেয়াল চলে আসায় হযরত আবু তালহার নামাজের একাগ্রতা বা খুশু নষ্ট হয়ে যায়। তিনি সাথে সাথে সম্পূর্ণ বাগান আল্লাহর রাস্তায় সদকাহ করে দেন। কেননা নামাজের যে বাস্তবতা তা একাগ্রতার মধ্যে এ অংশগ্রহণ মেনে নেয় না।

যদিও বাগানেরও কিছু বাস্তবতা রয়েছে। বাগানের নয়নাভিরাম সবুজ-শ্যামল দৃশ্য,  বাগানের ফসল,  বাগানের মূল্য ইত্যাদির বাস্তবতা। কিন্তু নামাজের বাস্তবতার বিপরীতে এই বাস্তবতার কোনই মূল্য নেই। আবার নামাজের বাহ্যিক আকৃতি বাগানের বাস্তবতার মোকাবেলা করার সামর্থ্য রাখে না। বাগানের যে বাস্তবতা তার মোকাবেলা করার সামর্থ্য কেবল নামাজের প্রকৃত বাস্তবতারই আছে।

আর ঠিক এ কারণেই আজ আমাদের নামাজ সামান্য থেকে সামান্য বাস্তবতার মোকাবেলা করতে পারে না। কেননা,  আমাদের নামাজ অন্তঃসার শূন্য। আমাদের নামাজের বাহ্যিকরূপ আছে কিন্তু কোন বাস্তব রূপ নেই।

আপনারা হয়ত শুনেছেন,  ইয়ারমুকের যুদ্ধে সামান্য কয়েক হাজার মুসলিম সৈন্য ছিল,  বিপরীতে রোমান বাহিনী ছিল কয়েক লক্ষ। এমন সময় মুসলিম বাহিনীর অধীনে থাকা এক খ্রিস্টান সৈন্যের মুখ ফস্কে বের হয়ে গেল যে,  রোমান বাহিনীর সৈন্য-সংখ্যা সম্পর্কে আপনাদের কোন ধারণা আছে؟

একথা শুনে হযরত খালিদ রা. জজবার সাথে বললেন,  মুখ বন্ধ কর! আল্লাহর কসম! যদি তাদেরকে আমি আমার ঘোড়ার কেশের সমান মনে করতাম,  তাহলে আমি তাদেরকে এই বার্তা পাঠাতাম যে,  তোমরা আরও সমপরিমাণ সৈন্য নিয়ে ময়দানে আসো।

মহোদয়গণ!

একটু চিন্তা করে দেখুন,  হযরত খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর এই যে আত্মিক প্রশান্তি আর আত্মনির্ভরতা কিসের কারণে ছিল? আর তিনি রোমানদের এই বিশাল সংখ্যাকে কেন অবাস্তব মনে করেছিলেন?

এর কারণ হলো, তিনি প্রকৃত ইসলামকে ধারণ করতেন আর তিনি মনে করতেন তার বিপরীতে রোমানদের কেবল আকৃতি রয়েছে। তাঁদের কোন বাস্তব শক্তি নেই। তারা সকল ধরণের বাস্তবতা মুক্ত।

তিনি জানতেন, এই লাখো আকৃতি ইসলামের বাস্তবতার বিপরীতে মোটেও টিকতে পারবে না।

কালিমা তো আমরা অবশ্যই পড়ি, আমাদের মধ্যে অনেকেই কালিমার অর্থও জানি অথচ কালিমা ভিন্ন আরেক বস্তু। যা এই বাহ্যিক শব্দ ও শব্দার্থের অনেক উপরে। কালিমায় এই বাস্তবতা সাহাবিয়ে কেরাম উপলব্ধি করেছিলেন। আর একারণেই তারা যখন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলতেন তখন তারা বাস্তবেই এই বিশ্বাস করতেন যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মালিক নেই, তিনি ব্যতীত কোন বাদশাহ নেই। আল্লাহ ছাড়া ভালোবাসা ও ভয়ের উপযুক্ত কেউ নেই। আল্লাহ ব্যতীত কোন সৃষ্টির কোন অস্তিত্ব অসম্ভব।

আচ্ছা, কালিমা পড়ার পর এসব বাস্তবতা কি আমাদের অন্তরে উপলব্ধ হয়? আমাদের মস্তিষ্কে কি এবিষয়ে কখনও ভাবনার উদ্রেক হয়? আমাদের জীবনে এর কি কোন গভীর প্রভাব পড়ে?

যদি আমরা এ বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারতাম তাহলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার সাথে সাথে আমরা অনুভব করতাম যে, কত বড় কথা আমরা বলেছি। এ বাস্তবতার সামান্যতম অনুভূতি যার মধ্যে আছে সে ইসলামের দাবি করার সাথে সাথেই বুঝতে পারে যে, সে কত বড় দাবি করেছে?

Facebook
Twitter
LinkedIn

Leave a Reply